বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রদানে বদ্ধপরিকর। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে এ আইনটি বাতিল করে 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩' প্রবর্তন করা হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের সুরক্ষা প্রদানের অনন্য দলিল। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫, ১৭, ২০ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে অন্যান্য নাগরিকদের সাথে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমসুযোগ ও অধিকার প্রদান করা হয়েছে। সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদ দায়-দায়িত্বের অংশ হিসেবে ২০০৫-০৬ অর্থ বছর হতে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। শুরুতে ১,০৪,১৬৬ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ২০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়।
২০০৮-০৯ অর্থ বছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ জন এবং জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ২৫০ হিসেবে বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৬০.০০ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৬০ হাজার জনে, মাসিক ভাতার হার ৩০০ টাকায় এবং বার্ষিক বরাদ্দ ৯৩.৬০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০১০-১১ অর্থ বছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৮৬ হাজার জনে উন্নীত করা হয় এবং মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৩০০ টাকা টাকা হিসেবে বার্ষিক বরাদ্দ ১০২.৯৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮ লক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০ টাকা হিসেবে ১৬২০ কোটি টাকা প্রদান করা হচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিবিড় তদারকি এবং সমাজসেবা অধিদফতরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা বিতরণে প্রায় শতভাগ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এ বিভাগে ৪ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৪৪ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রায় ৪২৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের সময় প্রতিবন্ধী ভাতা কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা হল, বিদ্যমান বাস্তবায়ন নীতিমালা সংশোধন করে যুগোপযোগীকরণ, উপকারভোগী নির্বাচনে স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্তকরণ, ডাটাবেইজ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১০ টাকার বিনিময়ে সকল ভাতাভোগীর নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলে জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতার অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
বাস্তবায়নকারী দফতর
সমাজসেবা অধিদফতর
কার্যক্রম শুরুর বছর
২০০৫-০৬ অর্থবছর
কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
১. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি প্রদত্ত সাংবিধানিক ও আইনগত প্রতিশ্রম্নতি পূরণ;
২. অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন;
৩. দুঃস্থ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনয়ন;
৪. সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণপূর্বক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাছাইকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মাসিক ভাতা প্রদান;
৫. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় অমত্মর্ভুক্তকরণ।
সংজ্ঞা:
‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩ এ বর্ণিত যে কোন ধরনের প্রতিবন্ধিতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি;
প্রার্থী নির্বাচনের মানদন্ড:
১. আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর সংজ্ঞানুযায়ী প্রতিবন্ধী হতে হবে;
২. বাছাইকালে আবেদনকারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় আনতে হবে;
৩. ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে বৃদ্ধ/বৃদ্ধা প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে;
৪. ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতিবন্ধীগণ ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার লাভ করবে;
৫. নারী প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে;
৬. বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে;
৭. নতুন ভাতাভোগী মনোনয়নে অধিকতর দারিদ্রপীড়িত ও অপেক্ষাকৃত পশ্চাদপদ বা দূরবর্তী এলাকাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৮. চিকিৎসার লক্ষ্যে গরীব মানসিক/অটিস্টিক প্রতিবন্ধী শিশু (বয়স শিথিলযোগ্য) এবং সম্পূর্ণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ভাতা প্রাপকের যোগ্যতা ও শর্তাবলী:
১. সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে;
২. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ অনুযায়ী সমাজসেবা কার্যালয় হতে নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা সে জেলা হতে নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র গ্রহণ করবেন;
৩. মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৬,০০০ (ছত্রিশ হাজার) টাকার উর্ধে নয় এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ;
৪. আবেদনকারীকে অবশ্যই দুঃস্থ প্রতিবন্ধী হতে হবে;
৫. ৬ (ছয়) বছরের উর্ধে সকল ধরণের প্রতিবন্ধীকে ভাতা প্রদানের জন্য বিবেচনায় নিতে হবে;
৬. বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
ভাতা প্রাপ্তির অযোগ্যতা:
১. সরকারি কর্মচারী হলে কিংবা সরকারি কর্মচারী হিসেবে পেনশনভোগী হলে;
২. অন্য কোনভাবে নিয়মিত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত হলে;
৩. কোন বেসরকারি সংস্থা/সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হতে নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদানপ্রাপ্ত হলে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস