পটভূমি:
বাংলাদেশে সামাজিক সমস্যাগুলোর অন্যতম হচ্ছে যৌনবৃত্তি। আর এ নিন্দিত, অনৈতিক পেশায় সরাসরি যারা জড়িত তাদের বলা হয় যৌনকর্মী। বাংলাদেশের আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন, পাচার, প্রতারণা, অপহরণ, যৌনপল্লীতে জন্ম প্রভৃতি কারণে নারী ও শিশুরা যৌনকর্মীতে পরিণত হয়। এদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিশোরী ও কন্যা শিশু দারিদ্র ও অসহায়ত্বের কারণে সমাজের কিছু সংখ্যক দুশ্চরিত্র, অর্থলোভী ও ব্যভিচারী ব্যক্তির লোভ-লালসার শিকারে পরিণত হয়ে ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় এ পেশাকে বেছে নিতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরনের যৌনকর্মী দেখা যায়: হোটেল ভিত্তিক, পার্ক ও উদ্যানে ভাসমান এবং যৌনপল্লীভিত্তিক। সমাজের সবচেয়ে নিগৃহীত, পথ ভ্রষ্ট এ সকল যৌনকর্মীরা ইচ্ছা থাকা সত্বেও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসতে বাধাগ্রস্থ হয়, কেননা সমাজের চোখে তারা ধিকৃত, নিন্দিত ও অযোগ্য বলে বিবেচিত। অনেক ক্ষেত্রে তাদের পরিবারও গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। মৌলিক মানবিক চাহিদা ও নাগরিক অধিকার বঞ্চিত এবং মূল স্রোতধারা বিচ্ছিন্ন এ জনগোষ্ঠীর কিশোরী ও কন্যা শিশুদের উদ্ধার করে তাদের নিরাপত্তা বিধানসহ উপযোগী কর্মসূচী যেমন: কারিগরী শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, মানসিক উৎকর্ষসাধন ইত্যাদি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদেরকে আর্থ-সামাজিকভাবে পুনর্বাসন এবং সমাজের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ‘সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন’ কার্যক্রম চালু করে ২০০২ - ২০০৩ অর্থ বছরে। বর্তমানে দেশের ০৬ বিভাগে ০৬টি সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে।
রূপকল্প:
দারিদ্র, প্রতারনা, জবরদস্তি, অসহায়ত্ব কিংবা অন্যান্য প্রতিকূল অবস্থার শিকার হয়ে অর্থ বা উপঢৌকনের বিনিময়ে যৌন কর্মকান্ডে লিপ্ত তথা নৈতিকতা পরিপন্থী পেশায় নিয়োজিত কিশোরী ও কন্যা শিশুদের উদ্ধার করে তাদের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষার মাধ্যমে পরিবার ও সমাজের মূলধারায় প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করা।
অভিলক্ষ্য:
১। বিভিন্ন যৌনপল্লী ও অন্যান্য স্থানে জোরপূর্বক, প্রতারনা কিংবা অন্যান্য প্রতিকূল কারণে যৌনকর্মে নিয়োগকৃত অনুর্ধ্ব ১৮ বছরের সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়ে উদ্ধার করা।
২। উদ্ধারকৃত কিশোরী ও কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা, প্রযত্ন, চিকিৎসা, সংশোধন, ধর্মীয় অনুশাসন, প্রাথমিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও কারিগরী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
৩। অসামাজিক ও অমানবিক এ কাজের ক্ষতিকর দিকসমূহ সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টিসহ সমাজের দরিদ্র পরিবারের শিশু, কিশোরী ও তরুনীদেরকে যাতে এ কাজে বাধ্য করা না হয় সে সম্পর্কে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
৪। সাংবিধানিক অঙ্গিকার, শিশু আইন, ২০১৩ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী মেয়ে শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ প্রদান এবং শিশু অধিকার সম্বন্ধে তাদের সচেতন করা।
সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়ে’র সংজ্ঞা:
‘সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়ে’ বলতে তাদেরকে বুঝাবে যারা দারিদ্র, প্রতারণা, জবরদস্তি, অসহায়ত্ব এবং অন্যান্য প্রতিকূল অবস্থার শিকার হয়ে অর্থ বা উপঢৌকনের বিনিময়ে যৌন কর্মকান্ডে লিপ্ত তথা নৈতিকতা পরিপন্থী পেশায় নিয়োজিত হয়।
উদ্ধার প্রক্রিয়া ও কেন্দ্রে প্রেরণ পদ্ধতি:
যৌনকর্মে নিয়োজিত কন্যা শিশু, কিশোরী ও তরুনীদের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছরের উর্ধে নয়, তাদেরকে দেশের বিদ্যমান শিশু আইন, ২০১৩ , নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০, ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় (ব্যক্তি) পুনর্বাসন আইন, ২০১১ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন এবং বিধান মোতাবেক, স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগের সহায়তায় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিভিন্ন পতিতালয়, হোটেল, পার্ক ও উদ্যান এবং অন্যান্য স্থান থেকে উদ্ধার করে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে নিবন্ধনপূর্বক তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করা হয়। এক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলতে প্রবেশন অফিসার, পুলিশ অফিসার ও বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ১ম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটকে বুঝাবে। কেন্দ্রে নিবাসী প্রেরণের ক্ষেত্রে সাধারণত: যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়-
১। আদালত কর্তৃক প্রেরণ।
২। অন্য কোন প্রতিষ্ঠান/সংস্থা থেকে প্রেরিত (Referral) । তবে যে প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করবে সে প্রতিষ্ঠান উক্ত নিবাসীকে সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়ে হিসেবে প্রত্যয়ন করতে হবে।
৩। পুলিশ কর্তৃক আদালতে বিচার বা ঘোষণা পূর্ব অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য প্রেরণ।
৪। স্বেচ্ছায় ম্যাজিষ্ট্রেট/ নোটারী পাবলিক কর্তৃক এফিডেভিটকারী সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়ে।
৫। পাচারকারীদের কবল হতে উদ্ধারকৃত শিশু ও কিশোরী।
নিবাসী মুক্তি:
যে সকল ক্ষেত্রে আদালত সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ না করে কেন্দ্রে প্রেরণ করে, সেক্ষেত্রে, এধরনের মেয়েদের চারিত্রিক উৎকর্ষ, লব্ধ প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ, বিবাহ, অভিভাবক কর্তৃক দায়িত্ব গ্রহণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে কেন্দ্রের ব্যবস্থাপকের সুপারিশে ব্যবস্থাপনা কমিটি মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
সেবাগ্রহীতা:
বিজ্ঞ আদালত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সরকার অনুমোদিত এনজিও কর্তৃক প্রত্যয়িত বা উদ্ধারকৃত অনুর্ধ ১৮ বছরের যৌনকর্মী বা সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়ে।
সেবাদান পদ্ধতি:
সেবাদান কেন্দ্রসমূহ :
ক্রঃ নং |
কেন্দ্রের নাম ও অবস্থান |
অনুমোদিত আসন সংখ্যা |
কেন্দ্র প্রধানের পদবী |
টেলিফোন |
মোবাইল |
১। |
সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, আঐরকাঐর, ব্রাহ্মনবাড়িয়া |
১০০ জন |
ব্যবস্থাপক |
০৮৫১৬১২২৭ |
০১৭০৮৪১৫২১৫ |
সেবা প্রদানের সময়সীমা:
প্রয়োজনীয় ফি/ট্যাক্স/আনুষঙ্গিক খরচ:
সংশ্লিষ্ট আইন/বিধি/ নীতিমালা
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০
নৈতিকতা বিরোধী বৃত্তি দমন আইন ১৯৩৩
সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০২
নাগরিকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে:
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা:
ব্যবস্থাপক, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র।
নির্দিষ্ট সেবা পেতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রতিকারকারী কর্মকর্তা:
২০১৯-২০২০ অর্থ বছর পর্যন্ত সেবা প্রদানের পরিসংখ্যান:
ক্রঃনং |
কেন্দ্রের নাম |
কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠাকাল |
কেন্দ্রের মোট জমির পরিমাণ |
২০১৯-২০২০ অর্থ বছর পর্যন্ত মোট নিবাসী ভর্তি |
২০১৯-২০২০ অর্থ বছর পর্যন্ত মোট নিবাসী পুনর্বাসন |
শুরু থেকে আগষ্ট/ ২০২০ পর্যন্ত মোট ভর্তিকৃত নিবাসী |
শুরু থেকে আগষ্ট/ ২০২০ পর্যন্ত মোট পুনর্বাসনকৃত নিবাসী |
পুনর্বাসনের মাধ্যম |
১ |
সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, আঐরকাঐর, ব্রাহ্মনবাড়িয়া |
২০০২-২০০৩ |
১০৫০ একর |
৩৫ জন |
০ জন |
২৫৭ জন |
১৭৯ জন |
বৈবাহিক, চাকুরি, পরিবার ও সামাজিক পুনঃএকত্রীকরণ |
|
|
|
|
৩৫ জন |
০ জন |
২৫৭ জন |
১৭৯ জন |
|
সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক কতিপয় ছকঃ
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস